মহামঙ্গল সূত্রের বঙ্গানুবাদ
বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে অবস্থানকালে জনৈক দেবপুত্র কর্তৃক দেব-মনুষ্যগণের মঙ্গলের উপায় জিজ্ঞাসিত হলে বুদ্ধ আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল-বিষয় ব্যক্ত করেন। এটাই মঙ্গল সুত্র।
দ্বাদশ বছর পর্যন্ত দেবতা ও মনুষ্যগণ মঙ্গল বিষয় চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কিসে মঙ্গল হয় কেউ তা স্থির করতে পারেননি। অতঃপর এক দেবপুত্রের প্রশ্নে ভগবান বুদ্ধ সকল প্রকার পাপবিনাশক ও দেব-মানবের হিতের জন্য আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল বিষয় দেশনা করেছিলেন।
তা সংগতিতে ভিক্ষুসংঘের সামনে ব্যাখ্যা করেছিলেন বুদ্ধের প্রধান সেবক আনন্দ এভাবে, আমি এরুপ শুনেছি- এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথবিণ্ডিক নির্মিত বিহারে অবস্থান করছিলেন। তখন এক দেবতা স্বীয় দিব্যজ্যোতিতে সমস্ত জেতবন আলোকিত করে রাত্রির শেষ যামে ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন এবং ভগবানকে অভিবাদন করে একপার্শ্বে দাঁডিয়ে দেবতা গাথায় বললেন-
১। বহু দেবতা ও মনুষ্যগন মঙ্গল বিষয় চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কিসে মঙ্গল হয় কেহই অবগত হতে পারেন নি। আপনি দয়া করে দেব-মানবের হিত-সুখপ্রদ মঙ্গল বিষয় ব্যক্ত করুন।
২। অজ্ঞানী ব্যক্তির সেবা না করা, জ্ঞানী ব্যক্তির সেবা করা এবং পূজনীয় ব্যক্তিগণের পূজা করা উত্তম মঙ্গল।
৩।ধর্মত জীবন যাপনের উপযোগী প্রতিরূপ দেশে বাস করা, পূর্বকৃত পুণ্য প্রভাবে প্রভাবান্বিত থাকা ও নিজকে সম্যক পথে পরিচালিত করা উত্তম মঙ্গল।
৪। বহু শাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা, বিবিধ শিল্প শিক্ষা করা, বিনয়ী ও সুশিক্ষিত হওয়া এবং সুবাক্য ভাষণ করা উত্তম মঙ্গল।
৫। মাতা-পিতার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের ভরণপোষণ করা ও নিষ্পাপ ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করা উত্তম মঙ্গল।
৬। দান দেওয়া, কায়-বাক্য-মনে ধর্মাচরণ করা, ভরণপোষণ ও সুপরামর্শাদির দ্বারা জ্ঞাতিগণের হিতসাধন করা এবং নির্দোষ কর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।
৭। কায়িক ও মানসিক পাপে অনাসক্তি, বাচনিক পাপে বিরতি, মদ্যপানে সংযম এবং আপ্রমত্তভাবে পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।
৮। গৌরবনীয় ব্যক্তির প্রতি গৌরব করা, তাঁদের প্রতি বিনয় প্রদর্শন করা, প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকা, উপকারীর উপকার স্বীকার করা ও যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করা উত্তম মঙ্গল।
৯। ক্ষমাশীল হওয়া, গুরুজনের আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শীলগুণ বিমণ্ডিত শ্রমণদিগকে দর্শন করা ও উপযুক্ত সময়ে ধর্মালোচনা করা উত্তম মঙ্গল।
১০। পাপ বিনাশের জন্য তপস্যা, ব্রহ্মচর্য পালন, চতুরার্যসত্য প্রত্যক্ষ করণ ও নির্বাণ সাক্ষাত করা উত্তম মঙ্গল।
১১। লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিদা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ, এই আট প্রকার লোকধর্মে বিচলিত না হওয়া, শোকহীন, লোভ-দ্বেষ-মোহরূপ কলুষহীন ও ভয়হীন থাকা উত্তম মঙ্গল।
১২। এই সমস্ত মঙ্গল কর্ম সম্পাদন করলে দেব-মানবগণ সকল বিষয়ে ভয়লাভ করবে এবং নিরাপদে জীবন যাপন করেব। অতএব এগুল তাঁদের পক্ষে উত্তম মঙ্গল।
No comments:
Post a Comment