অনাগরিক ধর্মপাল

https://www.facebook.com/bablumutsuddy94/posts/2304428213132120

বৌদ্ধধর্ম জাগরণের অগ্রদূত অনাগরিক ধর্মপালের পাঁচ মিনিট সময় উৎসর্গে (ত্যাগ) স্বামী বিবেকানন্দের জগত জুড়ে খ্যাতি লাভ
লিখেছেন – বাবলু মুৎসুদ্দী
===============================
আগে আমরা একটু আলোচনা করে নিই শিকাগোতে কি ঘটেছিল ?
১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে অনাগরিক ধর্মপাল আমেরিকা গিয়ে বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে প্রতিদিনই বক্তৃতা দিতে শুরু করেন । সেখানে অবস্থান কালে ধর্মপালের সাথে বিবেকানন্দের সম্পর্ক হয় এবং খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় । আমেরিকার শিকাগো শহরে “The World’s Parliament of Religions” শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিখ্যাত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সে সম্মেলনে বিশ্ব বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে অনাগরিক ধর্মপাল বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রন লাভ এবং প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ।
স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগোতে সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন । কিন্তু বক্তব্য পেশ করার জন্য কোন আমন্ত্রন পাননি । তিনি সম্মেলন আয়োজকদের নিকট প্রার্থনা করেন যে তাকে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানে সুযোগ দেওয়ার জন্য তখন আয়োকজন কমিটির পক্ষ থেকে স্বামী বিবেকানন্দেকে বলা হয় যে আপনি যদি হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা হয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরকে প্রমান পূর্বক বার্তা বা আবেদন করতে হবে । তখন স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো হতে ভারতে তার সংবাদ পাঠান শংকারাচার্যের কাছে। শংকারাচার্যকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে হিন্দুধর্মের প্রবক্তার স্বীকৃতি দিয়ে একটি আবেদনা বা বার্তা পাঠিয়ে সম্মেলন কমিটিকে অবহিত করার জন্য । শংকরাচার্য স্বামী বিবেকানন্দকে বলেছিলেন জাতিতে তুমি ব্রাহ্মণ বা উচ্চ জাতি নও, তুমি শুদ্র এবং নিচু জাতি অতএব তোমাকে হিন্দুধর্মের প্রবক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয় । স্বামী বিবেকানন্দ এরূপ বর্ণ বৈষম্য বাক্য শ্রবণ করে খুবই মর্মাহত ও ব্যথিত হন ।
স্বামী বিবেকানন্দের ব্যথিত ও মানসিক অবস্থা দেখে অনাগরিক ধর্মপাল স্বামী বিবেকানন্দকে বললেন মন খারাপের কিছুই নেই আমি (ধর্মপাল ) অপ্রাণ চেষ্টা করব তখন বিবেকানন্দকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজক কমিটিদের কাছে গিলে বললেন বিবেকান্দ একজন পণ্ডিত, বিদ্বান ও সুবক্তা । তখন আয়োজন কমিটি বলেছেন ওনি জাতিতে এবং বর্ণ ব্যবস্থায় সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের, ব্রাহ্মণেরা তাঁকে হিন্দুধর্মের প্রবক্তা হতে দিচ্ছে না ।
তখন স্বামী বিবেকানন্দকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অনাগরিক ধর্মপালের ১৫ মিনিট সময় থেকে পাঁচ মিনিট সময় বরাদ্ধ করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ তাহলে কি বলেছিলেন ?
শুরুটা ছিল এভাবে; প্রিয় আমেরিকাবাসী ভগিনী ও ভ্রাতাগন বা Sisters and Brothers of America (বিবেকানন্দ, দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য পৃঃ৩২) শুধু এটা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সবাই দু্ই মিনিট করতালি দিয়েছিল ।
তিনি বললেন, আমি সেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে গৌরব বোধ করি, যে ধর্ম জগৎকে শিখিয়েছে সহিষ্ণুতা ও সর্বজনীন গ্রহীষ্ণুতার আদর্শ। আমরা শুধু সব ধর্মকে সহ্যই করি না, সব ধর্মকে আমরা সত্য বলে বিশ্বাস করি। আমি সে জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গর্ববোধ করি, যে জাতি সব ধর্মের নিপীড়িত ও শরণার্থী মানুষকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে।
সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামি এবং তার ভয়াবহ ফল, ধর্মোন্মত্ততা বহু দিন ধরে সুন্দর পৃথিবীকে গ্রাস করে রেখেছে। জগৎকে তারা হিংসায় পরিপূর্ণ করেছে। মানুষের রক্তে সিক্ত করে দিয়েছে এবং জাতির পর জাতি এর ফলে হতাশায় নিমগ্ন হয়েছে। এসব ভয়াবহ পিশাচ যদি না থাকত, মানবসমাজ এখনকার থেকে অনেক বেশি উন্নত হতো। কিন্তু তাদের অন্তিম সময় উপস্থিত। আন্তরিকভাবে আশা করি, এই সম্মেলনের সম্মানে আজ যে ঘণ্টাধ্বনি হলো, তা যেন সব ধর্মোন্মত্ততা, সব অত্যাচারের মৃত্যঘণ্টা হয়।
প্রথম দিনের বক্তৃতাই স্বামীজীকে আমেরিকায় পরিচিত করে তুলল। রাস্তায় রাস্তায় শোভা পেতে লাগল তার তেজোদৃপ্ত ছবি। পত্রপত্রিকাগুলো তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল। দি হেরাল্ড পত্রিকা লিখল ‘ধর্মমহাসভায় বিবেকানন্দই অবিসংবাদিতরূপে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।’ স্বামীজী হয়ে উঠেছিলেন ধর্মমহাসভার কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাই প্রায় প্রতিদিনই তাকে বক্তৃতা করতে হতো। মূল বিভাগে কিংবা বিজ্ঞান বিভাগে। ধর্মমহাসভা চলেছিল ১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের মধ্যে মতপার্থক্যের ফলে ধর্মমহাসভার ছন্দপতনে উপক্রম হয়। তখন স্বামীজী উঠে দাঁড়িয়ে ‘কুয়োর ব্যাঙের গল্প’টি বলে সবার মুখ বন্ধ করে দেন।
কুয়োর ব্যাঙ কুয়োতেই চিরকাল রয়েছে কুয়োর বাইরে কখনো যায়নি। কুয়োই তার জগৎ। তাই সাগর থেকে এক ব্যাঙ এসে যখন বলল, সাগর তার কুয়োর তুলনায় লক্ষ গুণ বড়, তখন সে তাকে মিথ্যাবাদী বলে অপমান করে তাড়িয়ে দিলো। এই গল্পটি বলে স্বামীজী বললেন, আমি একজন হিন্দু। আমার নিজের ছোট্ট কুয়োর মধ্যে বসে ভাবছি সেটাই সম্পূর্ণ জগৎ। খ্রিষ্টান তার নিজের ছোট্ট কুয়োর মধ্যে বসে ভাবছে সেটাই সম্পূর্ণ জগৎ। অন্য ধর্মের লোকও তাদের ধর্মকে সম্পূর্ণ জগৎ বলে ভাবছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর স্বামীজী লিখিত বক্তৃতাটি পাঠ করলেন, এটিই ধর্মমহাসভার স্বামীজীর প্রধান বক্তৃতা। ধর্মমহাসভায় তার নাম নথিভুক্ত হয়েছিল হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে।……………… (সংক্ষিপ্ত)
তথ্য সংগ্রহঃ
*বিবেকানন্দ, দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য
*ইন্টারনেট
* দৈনিক নয়াদিগন্ত, উপসম্পাদকীয়,১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
* দৈনিক আজাদীা উপসম্পাদকীয়, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
* Swami Vivekananda/Wikipedia

No comments:

Post a Comment