রতন সূত্র


রতন সূত্র 
***********
রত্ন সূত্রের উৎপত্তি :
-----------------------------
ভগবান বুদ্ধের জীবদ্দশায় বৈশালী অতিশয় সমৃদ্ধশালী নগর ছিল। কালের গতিকে সর্ববিধ উপভোগ্য পরিভোগ্য বিত্তসম্পদ সমৃদ্ধ বৈশালীতে অনাবৃষ্টি দেখা দিল। অনাবৃষ্টির দরুণ কৃষকগণের শস্যক্ষেত্র বিনষ্ট হইয়া ভীষণ দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া পতিত হইল। প্রথমে সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষেরা অনাহারে মৃত্যু বরণ করিতে লাগিল। তাহাদের মৃতদেহ নগরের বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া হইত। কাজেই মৃতদেহের ভীষণ দুর্গন্ধ পাইয়া প্রেত-পিশাচাদি অমনুষ্যগণ নগরে আশ্রয় গ্রহণ করিল। কালক্রমে এত অধিক লোকের মৃত্যু হইতেছিল যে, মৃতদেহের সৎকার করা অসম্ভব হইয়া পড়িল। পঁচা-দুর্গন্ধময় মৃতদেহ দেখিতে দেখিতে ভয়ানক ঘৃণার উদ্রেক হইল, ঘৃণার দ্বারা নগরে বিসুচিকা রোগের প্রাদুর্ভাব হইল। দুর্ভিক্ষ, রোগ ও অমুনষ্য উপদ্রব এই ত্রিবিধ ভয়ে সন্ত্রস্ত বৈশালীবাসী প্রজাসাধারণ রাজার নিকট উপস্থিত হইয়া তাহাদের অসহ্য দুঃখ-কাহিনী বিবৃত করিতেছিলেন-
“মহারাজ, নগরে ত্রিবিধ ভয় উৎপন্ন হইয়াছে। ইতিপূর্বে রাজ-পরম্পরা সাত রাজার রাজত্ব কাল পর্য্যন্ত এরূপ দুর্দশা দেখা যায় নাই। আমাদের মনে হয়- ইহা আপনার অধার্মিকতার দ্বারাই ঘটিতেছে।” এতদশ্রবণে রাজা উদ্বিগ্ন চিত্তে মন্ত্রণাগৃহে সম্মিলিত হইয়া বলিলেন- “তোমরা আমার অধার্মিকতা সম্বন্ধে বিবেচনা করিয়া দেখ।” তাহারা সকলে বিচার করিয়া রাজার কোনও দোষ দেখিতে পাইলেন না।
অতঃপর তাহারা রাজার কোন প্রকার দোষ দেখিতে না পাইয়া ভাবিতে লাগিলেন- “কি প্রকারে আমাদের এই দুর্দশার অবসান হইবে?” তথায় কেহ কেহ বলিতে লাগিল- পুরাণ কশ্যপ, মক্ষলি গোশাল প্রভৃতি আজীবক (সন্ন্যাসী) শাস্তাগণ আছেন। তাহাদের পদধূলি পড়িলেই বৈশালীর মঙ্গল হইবে। অপর কেহ কেহ বলিতে লাগিল- “জগতে বুদ্ধ উৎপন্ন হইয়াছেন। সেই ভগবান সমস্ত প্রাণীর হিতের জন্য ধর্মোপদেশ করিয়া থাকেন। তিনি মহাঋদ্ধিবান, মহাপ্রভাবশালী। তাঁহার পদার্পণেই আমাদের সমস্ত ভয় তিরোহিত হইয়া যাইবে।”
‘বুদ্ধ’ এই নাম শুনিয়া তাহারা সকলে আনন্দিত হইয়া বলিতে লাগিল- “ভগবান বুদ্ধ সম্প্রতি কোথায় অবস্থান করিতেছেন? আমরা যদি লোক প্রেরণ করি, তিনি আসিবেন কি?” এ প্রস্তাবে অপর কেহ কেহ বলিতে লাগিল- “বুদ্ধগণ লোকের প্রতি অনুগ্রহকারী, কেন আসিবেন না?” তিনি এখন রাজগৃহে আছেন, মহারাজ বিম্বিসার তাঁহার সেবা করেন। তিনি যদি আসিতে বাধা না দেন, তবে অবশ্যই আসিবেন। “তাহা হইলে রাজাকে জানাইয়া আনয়ন করিব।” এই ভাবিয়া তাহারা দুইজন লিচ্ছবিকুমারকে সৈন্যবাহিনীসহ প্রভূত উপঢৌকন দিয়া রাজা বিম্বিসারের নিকট পাঠাইলেন এবং বলিলেন “রাজা বিম্বিসারকে বলিয়া ভগবানকে লইয়া আস।” তাঁহারা রাজগৃহে যাইয়া, রাজা বিম্বিসারকে তাঁহাদের উপঢৌকন প্রদান পূর্বক মনোবাঞ্চা নিবেদন করিলেন। রাজা তাঁহাদের অনুরোধ রক্ষা করিতে অসমর্থ হইয়া কহিলেন- “ইহা তোমরাই বুঝিতে পার।”
তাঁহারা ভগবানের চরণে উপনীত হইয়া প্রার্থনা করিলেন- “ভন্তে, আমাদের নগরে ত্রিবিধ ভয় উৎপন্ন হইয়াছে, যদি করুনাধার ভগবান করুনা করিয়া একবার বৈশালীতে শুভপদার্পন করেন, আমাদের অশেষ কল্যাণ সাধিত হইবে।”
তখন ভগবান সর্বজ্ঞতা প্রভাবে চিন্তা করিয়া দেখিতে পাইলেন- “আমি যদি বৈশালীতে ‘রত্নসূত্র’ দেশনা করি, তাহা হইলে ইহা কোটি শত সহস্র চক্রবালের রক্ষাদ- সদৃশ হইবে এবং চুরাশী হাজার প্রাণীর ধর্মজ্ঞান উৎপন্ন হইবে।” এই চিন্তা করিয়া ভগবান তাঁহাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিলেন।
রাজা বিম্বিসার ভগবান নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছেন জানিয়া যথোচিত উৎসব এবং ধুমধামের সহিত আগু বাড়াইয়া দিলেন। আর বৈশালীবাসীর ও রাস্তা-ঘাট সুসজ্জিত করিয়া স্তসম্মানে ভগবান বুদ্ধকে আগু বাড়াইয়া লইলেন। ভগবান বৈশালীর সীমায় পৌঁছিলে লিচ্ছবিগণ রাজা বিম্বিসারের চেয়ে দ্বিগুণ পূজা করিলেন।
সেই সময় আকাশ হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া উঠিল এবং বিদ্যুৎ চমকিয়া গড় গড় শব্দে মেঘ গর্জ্জন করিতে করিতে বারিবর্ষণ আরম্ভ করিল। মূষলধারে বারিবর্ষণের ফলে যেই জলপস্নাবন হইয়া ছিল, তাহা দ্বারা বৈশালীর দুর্গন্ধ মৃতদেহ ভাসিয়া গিয়া ভূভাগ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হইয়া গেল। ভগবান যখন বৈশালীতে উপনীত হইলেন, তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবপরিজন পরিবৃত হইয়া তথায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। মহাপ্রভাবশালী দেবতাগণের আবির্ভাবে প্রেত-পিশাচাদি অমনুষ্যদের অনেকে অন্তর্হিত হইয়া গেল।
অতঃপর ভগবান বুদ্ধ, প্রিয় শিষ্য আনন্দ স্থবিরকে ডাকিয়া কহিলেন- “আনন্দ, এই ‘রত্নসূত্র’ শিক্ষা করিয়া ধর্মপূজার উপকরণ সমূহ গ্রহণ করাইয়া লিচ্ছবি কুমারগণসহ বৈশালী নগরে তিনটি প্রাকারের অন্তরে বিচরণ করিতে করিতে আবৃত্তি কর।” কোটিলক্ষ চক্রবালের দেবতাগণ সেই ‘রতন সূত্রের’ আদেশ পালনে বাধ্য হয়। তাহারই প্রভাবে বৈশালীর রোগভয়, অমনুষ্য ভয় ও দুর্ভিক্ষভয় শীঘ্রই অন্তর্হিত হইয়া যাইবে। স্থবির আনন্দ ভগবানের আদেশে পরিত্রাণ পাঠ করিতে করিতে ভগবানের ব্যবহৃত পাত্রে জল লইয়া সমস্ত নগরে ছিটাইয়া ছিটাইয়া বিচরণ করিয়াছিলেন। এই জন্য ভূমিকায় বলা হইয়াছে “বেসালিযা পুরে তিসু পাকারন্তরেসু ...... আযস্মা আনন্দথোরো বিয কারুঞ্‌ঞচিত্তং উপট্‌ঠপেত্বা।”

👉রত্ন সূত্রের ভূমিকা:
পণিধানতো পট্‌ঠায তথাগতস্স দস পারমিযো, দস উপপারমিযো, দস পারমত্থ-পারমিযো’তি। সমতিংস পারমিযো পঞ্চ মহাপরিচ্চাগে লোকাত্থচরিযং ঞাতত্থচরিযং বুদ্ধত্থচরিযন্তি তিস্‌সো চরিযাযো, পচ্ছিমভবে গব্‌ভোক্কনিত্মং জাতিং অভনিক্‌খমনং পধানংচরিযং বোধিপল্লঙ্কে মার-বিজযং সব্বঞ্‌ঞূতা ঞানপটিবেধং ধম্মচক্কপবত্তনং নবলোকুত্তর ধম্মেতি, সব্বেপিমে বুদ্ধগুণে আবজ্জেত্বা বেসালিযা পুরে তিসু পাকারন্তরেসু তিযামরত্তিং পরিত্তং করোন্তো আযস্মা আনন্দ থোরো বিয কারুঞ্‌ঞচিত্তং উপট্‌ঠাপেত্বা;
কোটিসতসহস্‌সেসু চক্কবালেসু দেবতা,
যস্সনম্পাটিগ্গণ্‌হন্তি যঞ্চ বেসালিয়া পুরে।
রোগমনুস্স-দুব্‌িভক্‌খ-সম্ভুতং তিবিধং ভযং,
খিপ্পমন্তরধপেসি পরিত্তং তং ভণাম হে।

অনুবাদঃ- ভগবান গৌতম বুদ্ধ সুমেধ তাপস জন্মে অমরাবতী নগরে ভগবান দীপঙ্কর বুদ্ধের পদতলে পতিত হইয়া বুদ্ধত্ব লাভের যে প্রার্থনা করিয়াছিলেন, সেই প্রার্থনা হইতে আরম্ভ করিয়া তথাগতের দশ পারমিতা (দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, প্রজ্ঞা, বীর্য্য, ক্ষান্তি, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী ও উপেক্ষা), দশ উপপারমিতা (অধম ভাবে পূর্ণ দশ পারমিতা), দশ পরমার্থ পারমিতা (উক্ত দশপারমিতা উত্তমরূপে পূর্ণ হইলে পরমার্থ পারমিতা হয়), মোট ত্রিশটি পারমিতা; পঞ্চ মহাদান, জগতের হিতাচরণ; জ্ঞাতিগণের হিতাচরণ, বুদ্ধ হওয়ার জন্য সদাচরণ, এই তিন প্রকার আচরণ, শেষ জন্মে অর্থাৎ যে জন্মে বুদ্ধ হইয়াছিলেন সে জন্মে মায়ের গর্ভে প্রবেশ, জন্ম, সংসার ত্যাগ, কঠোর তপস্যা, বোধিবৃক্ষের মূলে মার-বিজয়, সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভ, ধর্মচক্রপ্রবর্তন ও নবলোকোত্তর ধর্ম প্রচার ইত্যাদি সকল প্রকার বুদ্ধগুণ স্মরণ করিয়া বৈশালী নগরের প্রাচীরত্রয়ের মধ্যে তিন প্রহর রাত্রি পরিত্রাণ পাঠকারী আয়ুষ্মান আনন্দ স্থবিরের মত করুনা পূর্ণ চিত্তে আমারা-
শত সহস্র কোটি চক্রবালবাসী দেবতাগণ যেই রত্নসূত্রের আদেশ প্রতিপালন করেন এবং সেই রত্নসূত্র পাঠে বৈশালী নগরীতে রোগ, অমনুষ্য ও দুর্ভিক্ষ এই তিন প্রকার ভয় শীঘ্রই দুরীভূত হইয়াছিল, সেই রত্নসূত্র (পরিত্রাণ) পাঠ করিতেছি।

সূত্রারম্ভ
-------------
(১) যানীধ ভুতানি সমাগতানি
ভুম্মানি বা যানিব অন্তলিক্‌খে,
সব্বে ভুতা সুমনা ভবন'
অথোপি সক্কচ্চ সুনন' ভাসিতং।
অনুবাদঃ- ভূমিবাসী ও আকাশবাসী যে সকল প্রাণী এখানে সমাগত হইয়াছ, তোমরা সকলেই সন্তুষ্ট হও এবং আমার দেশিত বাক্য মনোযোগের সহিত শ্রবণ কর।
(২) তস্মাহি ভুতা নিসামেথ সব্বে
মেত্তং করোথ মানুসিযা পজায,
দিবা চ রত্তো চ হরন্তি যে বলিং
তস্মাহি নে রক্‌খথ অপ্পমত্তা।
অনুবাদঃ- (জগতে বুদ্ধবাক্য দুর্লভ) সেই হেতু তোমরা সকলে আমার উপদেশ মনোযোগ দিয়া শ্রবণ কর; মনুষ্যগণের প্রতি মৈত্রীচিত্ত পোষণ করিয়া তাহাদের হিত-সুখ কামনা কর; তাহারা দিবা-রাত্র তোমাদের উদ্দেশ্যে পুন্যদান করিয়া পূজা করে। এই কারণে তোমরা অপ্রমত্ত হইয়া তাহাদিগকে রক্ষা কর।
(৩) যং কিঞ্চি বিত্তং ইধ বা হুরং বা
সগ্‌গেসু বা যং রতনং পনীতং,
ননো সমং অত্থি তথাগতেন।
ইদম্পি বুদ্ধে রতনং পনীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- ইহলোক-পরলোকে অথবা স্বর্গ-ব্রহ্মাদিলোকে যাহা কিছু মূল্যবান মনি-রত্নাদি রত্ন আছে, তাহা তথাগত বুদ্ধের সমান নহে। সেই সকল রত্ন হইতে বুদ্ধরত্নই শ্রেষ্ঠ। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের শুভ হউক।
(৪) খযং বিরাগং অমতং পণীতং
যদজ্ঝগা সক্যমুনী সমাহিতো,
ন তেন ধম্মেন সমত্থি কিঞ্চি
ইদম্পি ধম্মে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- সমাধিস্থ শাক্যমুনি বুদ্ধ যেই লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয় বিরাগ ও অনুপম নির্বাণামৃত পান করিয়াছেন, সেই নির্বাণ ধর্মের সমান কিছুই নাই। ত্রিলোকের সমস্ত মূল্যবান ধন বা রত্ন হইতে এই ধর্ম রত্নই শ্রেষ্ঠ। এই সত্য বাক্যের প্রভাবে স্বস্তি বা মঙ্গল হউক।
(৫) যং বুদ্ধসেট্‌ঠো পরিবন্নযী সুচিং
সমাধিমানন্তরিকঞ্‌ঞামাহু,
সমাধিনা তেন সমো ন বিজ্জতি।
ইদম্পি ধম্মে রতনং পণীতং,
অনুবাদঃ- ত্রিলোক শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ যেই শুচি (রাগ-দ্বেষাদি ময়লাহীন পবিত্র) লোকোত্তর মার্গ-সমাধির (মার্গচিত্তের) প্রশংসা করিয়াছেন এবং যেই মার্গ-চিত্ত-উৎপত্তির পরক্ষণেই বিনা অন্তরায়ে স্বাভাবিক নিয়মেই উহার ফল-চিত্ত উৎপন্ন হইয়া থাকে, এইরূপ পবিত্র আর্য্যমার্গ-সমাধির (মার্গ-চিত্তের) সমান অন্য কোনও সমাধি নাই অর্থাৎ আর্য্যমার্গ-জ্ঞান সদৃশ অন্য কোন জ্ঞান নাই। জাগতিক্‌ সমস্ত ধন বা রত্ন হইতে এই ধর্ম রত্নই শ্রেষ্ঠ। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের স্বস্তি বা শুভ হোক।
(৬) যে পুগ্গল অট্‌ঠসতং পসত্থা
চত্তারি এতানি যুগানি হোন্তি,
তে দক্‌খিনেয্যা সুগতস্স সাবকা
এতেসু দিন্নানি মহপ্‌ফলানি
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- যেই অষ্টবিধ আর্য্যপুদ্গলকে বুদ্ধাদি সৎপুরুষেরা প্রসংশা করিয়াছেন, যাঁহারা মার্গস'-ফলস্থ ভেদে চারিযুগ্ম ; যেই সুগত বুদ্ধের শ্রাবক বা শিষ্য দক্ষিণার উপযুক্ত পাত্র। সেই পুণ্যক্ষেত্র সংঘরত্নে দান করিলে মহাফল (মহৎপুণ্য) লাভ হয়। ইহা সংঘরত্নের শ্রেষ্ঠতা। এই সত্য বাক্যের দ্বারা আমাদের শুভ বা কল্যাণ হউক।
(৭) যে সুপ্পযুত্তা মনসা দলহেন
নিক্কামিনো গোতম সাসনম্‌হি
তে পতিপত্তা অমতং বিগয্‌হ
লদ্ধা মুধা নিব্বুতিং ভূঞ্জমানা।
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- বুদ্ধ শাসনে প্রব্রজিত হইয়া যাঁহারা শীলে সুপ্রতিষ্ঠিত সমাধিতে দৃঢ় (নিশ্চল) এবং বিদর্শন-ভাবনায় রাগ-দ্বেষ-মোহাদি ক্লেশমুক্ত হইয়াছেন, অথবা যাঁহারা শীল-সমাধি-বিদর্শনরূপ সাধন-পথে সাধন করিয়া অমৃতপথ (নির্বাণ) সাক্ষাৎকার করিয়াছেন। তাঁহারা এখন বিনামূল্যে লব্ধ নির্বাণ সুখ উপভোগ করিতেছেন অর্থাৎ তাঁহারা (অর্হৎগণ) ফল-সমাপত্তি (নির্বাণসমাধি) লাভ করিয়া নির্বাণ সুখ অনুভব করিতেছেন। ত্রিলোকের সমস্ত ধন বা রত্ন হইতে এই সংঘ রত্নই শ্রেষ্ঠ। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের শুভ বা মঙ্গল হউক।
(৮) যথিন্দখীলো পঠবিং সিতো সিযা
চতুব্‌িভ বাতেভি অসম্পকম্পিযো,
তথুপমং সপ্পুরিসং বদামি
যো অরিযসচ্চানি অবেচ্চ পস্সতি
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- ভূমিতে দৃঢ়রূপে প্রোথিত ইন্দ্রখীল (নগরদ্বারস্থ স্তম্ভবিশেষ) যেমন প্রবল বায়ুতেও কম্পিত হয় না। যিনি চতুরার্য্য সত্য প্রজ্ঞা-চক্ষুতে স্পষ্টরূপে দর্শন করিতেছেন, তেমন সেই সৎপুরুষকেও আমি উক্ত ইন্দ্রখীলের সহিত তুলনা করি (অর্থাৎ তিনিও ইন্দ্রখীলের ন্যায় অচল অটল)। ত্রিলোকের সমস্ত ধন বা রত্ন হইতে এই সঙ্ঘরত্ন ও শ্রেষ্ঠ। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের কল্যাণ বা মঙ্গল হউক।
(৯) যে অরিযসচ্চানি বিভাবযন্তি
গম্ভীর পঞ্‌ঞেন সুদেসিতানি,
কিঞ্চাপি তে হোন্তি ভুসপ্পমত্তা
ন তে ভবং অট্‌ঠমং আদিযন্তি।
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- গভীর প্রাজ্ঞ বুদ্ধ কর্তৃক সুদেশিত চারি আর্য্যসত্যকে যাঁহারা জ্ঞানের গোচরীভূত করেন (জ্ঞান-চক্ষুতে দর্শন করেন) তাঁহারা প্রমাদবহুল হইলেও সংসারে আটবারের অধিক জন্মগ্রহণ করেন না- সপ্তম জন্মেই বিদর্শন ভাবনা করিয়া অরহত্ব-ফল লাভ করেন এবং আয়ুশেষে পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। সঙ্ঘরত্নের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদক এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের স্বস্তি বা কল্যাণ হউক।
(১০) সহাবস্স দস্সন সম্পদায
তযস্‌সু ধম্মা জহিতা ভবিন্ত,
সক্কাযদিট্‌ঠি বিচিকিচ্ছি তঞ্চ
সীলব্বতং বা’পি যদত্থি কিঞ্চি।
চতুহ’ পাযেহি চ বিপ্পমুত্তো
ছ চাভিট্‌ঠানানি অভব্বো কাতুং;
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- দর্শন সম্পদ অর্থাৎ স্রোতাপত্তি-মার্গ-জ্ঞান লাভের সঙ্গে সঙ্গেই সৎকায়দৃষ্টিসহ (অহং জ্ঞান) অপর যাহা কিছু মিথ্যাদৃষ্টি (৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি), যাহা কিছু সংশয় (২৪ প্রকার সংশয়) এবং যাহা কিছু শীল-ব্রত (গোশীল গোব্রত, কুক্কুটশীল-কুক্কুটব্রতাদি নানাবিধ মিথ্যাশীল-মিথ্যাব্রত) এই তিন প্রকার মিথ্যা ধর্ম (সৎকায়-দৃষ্টি, সংশয় ও শীলব্রত) দূরীভূত হয়। তিনি চারি অপায় (নরক, তির্য্যক্‌যোনি, প্রেতলোক ও অসুরলোক) হইতে বিমুক্ত এবং ছয় প্রকার (মাতৃ-হত্যা, পিতৃহত্যা, অরহৎহত্যা, বুদ্ধের পাদ হইতে রক্তপাত, বুদ্ধের শরণ ব্যতীত অন্য শরণ গ্রহণ ও সঙ্ঘভেদ) মহাপাপ (গুরুতর পাপ) করা তাঁহার পক্ষে অসম্ভব। পার্থিব ধন বা রত্ন হইতে এই সঙ্ঘ রত্নও শ্রেষ্ঠ এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের শুভ হউক।
(১১) কিঞ্চাপি সো কম্মং করোতি পাপকং
কাযেন বাচা উদ চেতসা বা,
অভব্বো সো তস্স পটিচ্ছদায
অভব্বতা দিট্‌ঠপাদস্স বুত্তা।
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- তিনি (স্রোতাপন্ন পুরুষ) কায়, বাক্য ও মনের দ্বারা পাপকর্মের অনুষ্ঠান করেন না; ভূলক্রমে ক্কচিৎ কোন ক্ষুদ্র পাপ করিলেও, তাহা গোপন করেন না। কারণ নির্বাণদর্শী স্রোতাপন্ন পুরুষের পক্ষে স্বভাবতঃ সামান্য পাপও গোপন করা সম্ভব নহে, ইহা সঙ্ঘ রত্নের শ্রেষ্ঠতা। এই সত্য বাক্যের প্রভাবে তোমাদের শুভ হউক।
(১২) বনপ্পগুম্বে যথা ফুস্‌সিতগ্গে
গিম্‌হান মাসে পঠমস্মিং গিম্‌হে,
তথূপমং ধম্মবরং অদেসযী
নিব্বানগামিং পরমং হিতায।
ইদম্পি বুদ্ধে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- গ্রীষ্মঋতুর প্রথম মাসে (চৈত্রমাসে, বসন্তকালে) বন-গুল্মে বৃক্ষ-লতাদির শাখা-প্রশাখাসমূহ যেমন প্রস্ফুটিত নানা ফুলে শোভিত হয়, সেইরূপ স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু, ইন্দ্রিয়, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা ইত্যাদি নানাবিধ হিতকর ধর্মবিষয়ে পরিশোভিত ও নির্বাণগামী মার্গদীপক ত্রিপিটক ধর্মদেব, মনুষ্যাদি জীবগণের হিতের জন্য ভগবান বুদ্ধ প্রচার করিয়াছেন। বুদ্ধরত্নের ইহাই শ্রেষ্ঠতা। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের শুভ হউক।
(১৩) বরো বরঞ্‌ঞু বরদো বরাহরো,
অনুত্তরো ধম্মবরং অদেসযী,
ইদম্পি বুদ্ধে রতনং পণীতং
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- বর (শ্রেষ্ঠ), বরজ্ঞ, (নির্বাণজ্ঞ), বরদ (বিমুক্তি শান্তি দাতা) বরাহর (উত্তম প্রতিপদা বা মার্গ আহরণকারী), অনুত্তর (শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ) শ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রচার করিয়াছেন অর্থাৎ বহুকল্প দুষ্কর সাধনা করিয়া ভগবান বুদ্ধ যেই নির্বাণ ধর্ম লাভ করিয়াছেন, তাহা তিনি সর্বলোকের হিতের জন্য জগতে প্রচার করিয়াছেন বিশেষার্থ এইঃ- শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ শ্রেষ্ঠ নির্বাণ ও নির্বাণলাভের শ্রেষ্ঠ প্রতিপদা (মার্গ) দেশনা করিয়াছেন- প্রচার করিয়াছেন সর্বজীবের মুক্তির জন্য। ইহা বুদ্ধরত্নের শ্রেষ্ঠতা। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের মঙ্গল হউক।
(১৪) খীণং পুরাণং নবং নত্থি সম্ভবং
বিরত্তচিত্তা আযাতিকে ভবস্মিং,
তেন খীনা বীজা অবিরূল্‌হিচ্ছন্দা
নিব্বন্তি ধীরা যথা’যং পদীপা।
ইদম্পি সঙ্ঘে রতনং পণীতং,
এতেন সচ্চেন সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- যাঁহারা অরহত্ব-ফল প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাঁহাদের পুরাতন কর্ম ক্ষীণ (বিনষ্ট) হইয়াছে, আর নূতন কর্মের উৎপত্তি নাই, পুনর্জন্মে তাঁহাদের আসক্তি নাই, তাঁহাদের পুনর্জন্মের কর্ম-বীজ বিনষ্ট এবং তৃষ্ণামূল উৎপাটিত হইয়াছে। সেই জ্ঞানবান অরহৎগণ এই প্রদীপের ন্যায় নির্বাপিত হইয়া থাকেন। সঙ্ঘরত্নের ইহাই শ্রেষ্ঠতা। এই সত্য বাক্যের দ্বারা তোমাদের শুভ হউক।
(১৫) যানীধ ভুতানি সমাগতানি
ভুম্মানি বা যানিব অন্তলিক্‌খে,
তথাগতং দেবমনুস্স- পুজিতং
বুদ্ধ নমস্‌সাম সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- তৎপর দেবরাজ ইন্দ্র বলিলেন;- ভূমিবাসী বা আকাশবাসী যেই সমস্ত ভূত বা সত্ত্বগণ এখানে সমাগত হইয়াছে, আস সকলে সম্মিলিত হইয়া দেব-মনুষ্যাদি সকলের পূজনীয় তথাগত বুদ্ধকে নমস্কার করি। এই নমস্কারের প্রভাবে সকলের শুভ হউক।
(১৬) যানীধ ভুতানি সমাগতানি
ভুম্মানি বা যানিব অন্তলিক্‌খে,
তথাগতং দেবমনুস্স-পুজিতং
বুদ্ধং নমস্সম সুবত্থি হোতু।
(১৭) যানীধ ভুতানি সমাগতানি
ভুম্মানি বা যানিব অন্তলিক্‌খে,
তথাগতং দেবমনুস্স-পুজিতং
সঙ্ঘং নমস্সম সুবত্থি হোতু।
অনুবাদঃ- ১৬ ও ১৭ নম্বর গাথা দুইটির অনুবাদও ১৫ নম্বর গাথার অনুবাদের মত। কেবল ‘বুদ্ধকে’ স্থলে ‘ধর্মকে’ ও ‘সঙ্ঘকে নমস্কার করি এই মাত্র প্রভেদ। শেষ গাথা তিনটি দেবরাজ ইন্দ্র বলিয়াছিলেন। এই সূত্র দেশনার ফলে বৈশালী নগরীতে সুবৃষ্টি হইয়াছিল। দুর্ভিক্ষভয়াদি যাবতীয় উপদ্রবের উপশম এবং নগরবাসী সকলের মঙ্গল হইয়াছিল।

মঙ্গল সুত্র পালি ও বাংলা অনুবাদ

মঙ্গল সুত্র 
পালি ও বাংলা অনুবাদঃ
যং মঙ্গলং দ্বদাসহি চিন্তাযিংসু সদেবকা,
সোত্থানং নাধি গচ্ছন্তি অট্ঠতিংসঞ্চ মঙ্গলং;
দেসিতং দেব-দেবেন সব্বপাপ বিনাসনং,
সব্বলোকহিত্থায মঙ্গলং তং ভণামহে।
বহুদেবতা ও মনুষ্য দীর্ঘ বার বছরব্যাপী চিন্তা করেও "কিসে প্রকৃত মঙ্গল হয় " তা জানতে পারেনি। সকল প্রকার পাপ বিনাশক বুদ্ধদেশিত সেই আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল বিষয় দেব-মানবের হিতার্থে প্রকাশ করতেছি।
পালি- ( বুদ্ধের সেবক আনন্দ ভান্তে)> এবম্মে সুতং একং সমযং ভগবা সাবত্থিযং বিহরতি জেতবনে অনাথপিন্ডকস্স আরামে। অথ খো অঞ্ঞতরা দেবতা অভিক্কন্তায রত্তিযা অভিকন্তবণ্না কেবলকপ্পং জেতবনং ওভাসেত্ব যেন ভগবা তেনুপসঙ্কমি; উপসঙ্কমিত্ব ভগবন্তং অভিবাদেত্বা একমন্তং ঠিতা খো সা দেবতা গাথায অজ্ঝভাসি-
আমি এরুপ শুনেছি- একসময় ভগবান অনাথপিন্ডিকের নির্মিত জেতবন বিহারে অবস্থান করছিলেন। সেসময় জনৈক দেবতা রাতের শেষভাগে সমগ্র জেতবন চতুর্দিক আলোকিত করে যেখানে ভগবান অবস্থান করছেন সেখানে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন (দাঁড়ানো অবস্থায় হাতজোড় করে বন্দনা) করতঃ একপার্শ্বে দাঁড়িয়েছিলেন। অতঃপর সেই দেবতা একপার্শ্বে স্থিতাবস্থায় ভগবানকে মঙ্গল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
দেবতাঃ
পালি- "বহুদেবা মনুস্সা চ, মঙ্গালানি অচিন্তাযুং,
আকাঙ্খামনা সোত্থানং ব্রুহি মঙ্গল মুত্তমং"।
বাংলা- বহু দেবতা-মনুষ্য মঙ্গল সম্পর্কে চিন্তা করেও কিসে মঙ্গল হয় সে বিষয় নির্ধারন করতে পারেনি। সেই আকাঙ্খিত সুখদায়ক উত্তম মঙ্গল ( সুখশান্তি/ উন্নতির হেতু বা কারন?) কি? তা আমাদেরকে ব্যাখ্যা বা দেশনা করুন।
বুদ্ধঃ পালি-অসেবনা চ বালানং, পন্ডিতানঞ্চ সেবনা,
পূজা চ পূজনীয্যানং এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- মূর্খ {(অজ্ঞানী/ অসভ্য/ হীন বা নীচমনা, অন্যায়-অপরাধকারী/ দুঃখসৃষ্টিকারী/ লোভী হিংসাকারী, অত্যাচারী, প্রানী হত্যাকারী,পরদ্রব্য চুরকারী, মিথ্যাবাদী, ব্যভিচারী (ধর্ষনকারী), নেশাপানকারী (মাতাল,উন্মাদ) পাপী, মানুষরুপী অমানুষ} ব্যক্তির সেবা না করা, পন্ডিত বা জ্ঞানী ব্যক্তির সেবা করা, পুজনীয় ব্যক্তির পূজা করা উত্তম মঙ্গল।
পালিঃ-পতিরুপ দেসবাসো চ, পুব্বে চ কতপুঞ্ঞতা,
অত্তসম্মা পণিধি চ, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- ধর্মতঃ জীবনাচরনে সুযোগ-সুবিধাপুর্ণ দেশে বাস করা, পুর্বকৃত পুন্যাকর্ম বা আত্ম-পরহিতকর ভাল কাজ স্মরন করা ও আত্মসম্মান বজায় রেখে জীবনাচরন করা উত্তম মঙ্গল।
পালি- বাহুসচ্চঞ্চ সিপ্পঞ্চ, বিনযো চ সুসিক্খিতো,
সুভাসিতা চ যা বাচা, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- বহুশাস্ত্রের (সত্য ও বাস্তবতা বিষয়ক বই পড়ে) জ্ঞান অর্জন করে সুপন্ডিত হওয়া, বিবিধ শিল্প শিক্ষা করা, বিনয় (নীতি-নৈতিকতাপুর্ণ) আদর্শে সুশিক্ষিত হওয়া, (হিংসাত্বক বাক্যে সমালোচনা নাকরে) সুভাষিত বাক্য ভাষন করা উত্তম মঙ্গল।
পালি- মাতাপিতু উপটঠানং পুত্তদারস্স সঙ্গহো,
অনাকুলা চ কম্মন্তা, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- (শীলবান সচ্চরিত্র বা আদর্শবান) মাতাপিতার সেবা-পুজা ও স্ত্রী-পুত্রের ভরনপোষন করা, অনুকুল (ধর্মতঃ সুশৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনাচরনে সহায়ক) কর্ম সম্পাদন করে জীবিকা নির্বাহ করা উত্তম মঙ্গল।
পালি-দানঞ্চ, ধম্মচরিযা চ, ঞাতকানঞ্চ সঙ্গহো,
অনাবজ্জানি কম্মানি, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- দান, ধর্ম আচরন (সুশৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনাচরন) ও জ্ঞাতিদের উপকার সাধন ( যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা) করা, অনবদ্য কর্ম ( নির্দোষ বা ভালকাজ) সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।
পালি- আরতি বিরতি পাপা, মজ্জপানা চ সংযমো,
অপ্পমাদো চ ধম্মেসু, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- পাপকাজ হতে বিরত থাকা, মদ্যপানে সংযমতা (নেশাগ্রস্ত না হওয়া), ধর্মে ( সুশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করে) অপ্রমাদ বা সচেতন থাকা উত্তম মঙ্গল।
পালি- গারবো চ, নিবাতো চ, সন্তুট্ঠি চ কতঞ্ঞুতা,
কালেন ধম্ম সবনং, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- গৌরবনীয় ব্যক্তিকে গৌরব করা, তাদের প্রতি নম্রতা(ভদ্রতাভাব) পোষন করা, সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যথাসময়ে ধর্মদেশনা শ্রবনকরা উত্তম মঙ্গল।
পালি- খন্তী চ সোব চস্সতা, সমণানঞ্চ দস্সনং,
কালেন ধম্ম সবনং, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- (সুবাধ্যদের প্রতি) ক্ষমাশীল হওয়া, ভিক্ষু-শ্রমণের দর্শন করা, যথাসময়ে (উপযুক্ত সময়ে) ধর্মালোচনা করা উত্তম মঙ্গল।
পালি- তপো চ ব্রহ্মচরিযা চ, অরিযসচ্চান দস্সনং,
নিব্বান সচ্চিকিরিযা চ, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- তপঃচর্যা (ধ্যান/ ভাবনা/সাধনা) করা, ব্রহ্মচর্য আচরন করা, আর্যসত্য দর্শন করা এবং (জন্ম-জরা-ব্যধি-মৃত্যু হহতে মুক্তাবস্থা) নির্বান সাক্ষাত করা উত্তম মঙ্গল।
পালি- ফুট্ঠস্স লোকধম্মেহি, চিত্তং যস্স না কম্পতি,
অসোকং বিরজং খেমং, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- (লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ) অষ্ট লোকধর্মে (নিয়মে) চিত্তকে অবিচল রাখা, শোকহীন, নিষ্পাপ, পবিত্র ও নিরাপদে থাকা উত্তম মঙ্গল।
পালি- এতাদিসানি কত্বান, সব্বত্থমা পরাজিতা,
সব্বত্থ সোত্থিং গচ্ছন্তি, এতং মঙ্গল মুত্তমং।
বাংলা- যাঁরা এ সকল মঙ্গল কর্ম সম্পাদন করেন তাঁরাই সর্বত্র অপরাজেয় (জয়ী) হন। তাঁরা সর্বত্র স্বস্ত্বির সাথে সুখে, নিরাপদে, নির্বিঘ্নে অবস্থান করেন। ইহাই উত্তম মঙ্গল
ইহাই দেব-মানবের উত্তম মঙ্গল (সুখশান্তি উন্নতি) -এর হেতু বা কারন।
(সংকলিত)
জগতের সকল প্রানী সুখী হোক।
সাধু সাধু সাধু

মহামঙ্গল সূত্রের বঙ্গানুবাদ

মহামঙ্গল সূত্রের বঙ্গানুবাদ

বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে অবস্থানকালে জনৈক দেবপুত্র কর্তৃক দেব-মনুষ্যগণের মঙ্গলের উপায় জিজ্ঞাসিত হলে বুদ্ধ আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল-বিষয় ব্যক্ত করেন। এটাই মঙ্গল সুত্র।
দ্বাদশ বছর পর্যন্ত দেবতা ও মনুষ্যগণ মঙ্গল বিষয় চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কিসে মঙ্গল হয় কেউ তা স্থির করতে পারেননি। অতঃপর এক দেবপুত্রের প্রশ্নে ভগবান বুদ্ধ সকল প্রকার পাপবিনাশক ও দেব-মানবের হিতের জন্য আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল বিষয় দেশনা করেছিলেন।
তা সংগতিতে ভিক্ষুসংঘের সামনে ব্যাখ্যা করেছিলেন বুদ্ধের প্রধান সেবক আনন্দ এভাবে, আমি এরুপ শুনেছি- এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথবিণ্ডিক নির্মিত বিহারে অবস্থান করছিলেন। তখন এক দেবতা স্বীয় দিব্যজ্যোতিতে সমস্ত জেতবন আলোকিত করে রাত্রির শেষ যামে ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন এবং ভগবানকে অভিবাদন করে একপার্শ্বে দাঁডিয়ে দেবতা গাথায় বললেন-
১। বহু দেবতা ও মনুষ্যগন মঙ্গল বিষয় চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কিসে মঙ্গল হয় কেহই অবগত হতে পারেন নি। আপনি দয়া করে দেব-মানবের হিত-সুখপ্রদ মঙ্গল বিষয় ব্যক্ত করুন।
২। অজ্ঞানী ব্যক্তির সেবা না করা, জ্ঞানী ব্যক্তির সেবা করা এবং পূজনীয় ব্যক্তিগণের পূজা করা উত্তম মঙ্গল।
৩।ধর্মত জীবন যাপনের উপযোগী প্রতিরূপ দেশে বাস করা, পূর্বকৃত পুণ্য প্রভাবে প্রভাবান্বিত থাকা ও নিজকে সম্যক পথে পরিচালিত করা উত্তম মঙ্গল।
৪। বহু শাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা, বিবিধ শিল্প শিক্ষা করা, বিনয়ী ও সুশিক্ষিত হওয়া এবং সুবাক্য ভাষণ করা উত্তম মঙ্গল।
৫। মাতা-পিতার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের ভরণপোষণ করা ও নিষ্পাপ ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করা উত্তম মঙ্গল।
৬। দান দেওয়া, কায়-বাক্য-মনে ধর্মাচরণ করা, ভরণপোষণ ও সুপরামর্শাদির দ্বারা জ্ঞাতিগণের হিতসাধন করা এবং নির্দোষ কর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।
৭। কায়িক ও মানসিক পাপে অনাসক্তি, বাচনিক পাপে বিরতি, মদ্যপানে সংযম এবং আপ্রমত্তভাবে পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।
৮। গৌরবনীয় ব্যক্তির প্রতি গৌরব করা, তাঁদের প্রতি বিনয় প্রদর্শন করা, প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকা, উপকারীর উপকার স্বীকার করা ও যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করা উত্তম মঙ্গল।
৯। ক্ষমাশীল হওয়া, গুরুজনের আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শীলগুণ বিমণ্ডিত শ্রমণদিগকে দর্শন করা ও উপযুক্ত সময়ে ধর্মালোচনা করা উত্তম মঙ্গল।
১০। পাপ বিনাশের জন্য তপস্যা, ব্রহ্মচর্য পালন, চতুরার্যসত্য প্রত্যক্ষ করণ ও নির্বাণ সাক্ষাত করা উত্তম মঙ্গল।
১১। লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিদা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ, এই আট প্রকার লোকধর্মে বিচলিত না হওয়া, শোকহীন, লোভ-দ্বেষ-মোহরূপ কলুষহীন ও ভয়হীন থাকা উত্তম মঙ্গল।
১২। এই সমস্ত মঙ্গল কর্ম সম্পাদন করলে দেব-মানবগণ সকল বিষয়ে ভয়লাভ করবে এবং নিরাপদে জীবন যাপন করেব। অতএব এগুল তাঁদের পক্ষে উত্তম মঙ্গল।

গৃহীদের প্রতি বিধুর পণ্ডিতের উপদেশ

গৃহীদের প্রতি বিধুর পণ্ডিতের উপদেশ
১। যারা নিজ-প্রজ্ঞাবলে সৎপথগামী, দৃঢ় উদ্যোগী, সূক্ষদর্শী, জ্ঞানী ও সর্ববিষয়ে বিশদরূপে বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন হন, তারাই সুখে গৃহ-বাস করতে পারেন।
২। যিনি পরদার গমন হতে দুরে থাকেন, সুস্বাদু খাদ্য-ভোজ্য একাকী ভোগ করেন না, জোতিষ শাস্ত্রের ভুলধারণার বশবর্তী হন না, তিনিই সুখে গৃহ-বাস করতে পারেন।
৩। শীলবান, গৃহ-কর্মে সুদক্ষ, পুণ্য- কর্মে অপ্রমত্ত, বিচারবুদ্ধি পরায়ণ, নিরহংকারী, মাৎসর্য্যহীন, সুবিনীত, মিষ্টভাষী ও শান্ত ব্যক্তিই সুখে গৃহ-বাস করতে পারেন।
৪। দানাদি সদুপায়ে কল্যাণ মিত্রের উপকারী, প্রার্থীদেরকে সমভাবে বস্তু বন্টনকারী, চাষ-বপনে সময় জ্ঞান সম্পন্ন ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে দান প্রদানকারী ব্যক্তিই সুখে গৃহ-বাস করতে পারেন।
৫। যিনি ধর্মকামী, জ্ঞানী, অভিজ্ঞ ধর্মধারীর নিকট ধর্ম জিজ্ঞাসু এবং শীলবান-বহুশ্রুতদেরকে সগৌরবে সেবা করেন, তিনিই সদ্ভাবে গৃহ-বাস করতে পারেন।
৬। ক্ষমামীল ও উপকারী গৃহী শান্তিতে গৃহ বাস করেন।
৭। সত্যবাদী-মানবের জীবন নিরাপদ হয় এবং মৃত্যুর পর ও তিনি অনুতপ্ত বা শোকগ্রস্ত হন না।

বৌদ্ধ ধর্মীয় সব বই

বৌদ্ধ ধর্মীয় সব বই

সার সংগ্রহ -শ্রীমৎ ধর্মতিলক স্থবির কর্তৃক অনুদিত!

ই-বুকের নাম- সার সংগ্রহ 
লেখক : শ্রীমৎ ধর্মতিলক স্থবির কর্তৃক অনুদিত!
Online published for the first time. Thanks to Buddha!

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য -শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির -Middle Part, page -64 to 263

ই-বুকের নাম- সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য
লেখক : শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির -Middle Part, page -64 to  263
Online published for the first time. Thanks to Buddha.

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য -শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির Last Part, page -264 to 404

ই-বুকের নাম- সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য
লেখক : শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির -Last Part, page -264 to  404
Online published for the first time. Thanks to Buddha.

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য -শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির part-1, page -1 to 63

সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য -শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির part-1, page -1 to 63: ই-বুকের নাম-  সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য লেখক :  শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির -part-1, page -1 to 63 Online published for the first time. Thanks to...

সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য -শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির part-1, page -1 to 63

ই-বুকের নাম- সদ্ধর্ম রত্নচৈত্য
লেখক : শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবির -part-1, page -1 to 63
Online published for the first time. Thanks to Buddha.

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

লোক-নীতি -শ্রীপ্রজ্ঞালোক স্থবির pdf

ই-বুকের নাম- লোক-নীতি 
লেখক : শ্রী প্রজ্ঞালোক স্থবির

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

ত্রিরত্ন মঞ্জরী - বঙ্কিম চন্দ্র চাকমা pdf

ই-বুকের নাম- ত্রিরত্ন মঞ্জরী 
লেখক : বঙ্কিম চন্দ্র চাকমা

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

সদ্ধর্ম দীপিকা -বিমলানন্দ মহাস্থবির - pdf

ই-বুকের নাম- সদ্ধর্ম  দীপিকা -বিমলানন্দ মহাস্থবির

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

বুদ্ধের শিক্ষা pdf

ই-বুকের নাম- বুদ্ধের শিক্ষা

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

বুদ্ধযুগে বৌদ্ধ নারী pdf

ই-বুকের নাম- বুদ্ধযুগে বৌদ্ধ নারী

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

আনন্দ PDF

ই-বুকের নাম- আনন্দ

ফরম্যাট- পি.ডি.ফ

ভাষা- বাংলা

“সোনাইছড়ি রাজ বিহার”

https://sonaicharirajvihar.blogspot.com/

“সোনাইছড়ি রাজ বিহার” by Rupak Barua

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে তেমনি একটি ছোট নদী সোনাইছড়ি , যারপাশেসোনাইছড়ি রাজ বিহার এবং সোনাইছড়ি গ্রাম  অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম জেলাররাঙ্গুনীয়া থানাধীন উত্তর ঘাটচেক  ইউনিয়নের নং ওয়াডের অন্তভুক্ত। সোনাইছড়ি নদীএখানে এসে ইছামতি  নদীতে শেষ হয় বিধায় নদীকে সম্মান দেখানোর জন্য এরূপ নামকরনকরা হয় 

রাজা ভূবন রায় কর্তৃক ১৮৯৮ সালে  বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য  নিয়ে মতদ্বৈত্যতাআছে।  সুনীতি রঞ্জন চাকমা মতে  ১৮৮০ সালে কালিন্দী রানী  এই বিহারটি নির্মাণকরেন এবং এটি  “কালিন্দী রানী রাজ বিহার  নামে পরিচিত ছিল,(সূত্রঃপৄষ্ঠাঃ /“ধূতাঙ্গঁভান্তের ত্যাগময় জীবন  ধর্ম ছায়া ) পরে নাম পরিবর্তন করে সোনাইছড়ি রাজ বিহার রাখা হয়। বিতর্ক যাই হোক , মহান বৌদ্ধধর্মের একটি  বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছেযার পেছনেছয়টি গ্রামের বিরাট এক জনগোষ্ঠী সদ্ধর্ম চর্চা করবে-  এটাই মূল কথা।

এই ছয়গ্রামগুলো হলোসাহাব্দীনগরজামপুকুরকোকানীয়াভূবনের খীলবিহার পাড়াএবং সোনাইছড়ি পূর্ব পাড়া।শত বছরের ইতিহাসে দেখা যায় যে , যাতায়তের অসুবিধারকারনে সাহাব্দীনগর গ্রামবাসীরা “সাহাব্দীনগর সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার নামক একটি বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন এবং তাতে ধর্ম চর্চায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে সোনাইছড়ি পূর্বপাড়ার একাংশ কর্তৃক ২০০২ সালে “সোনাইছড়ি সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার নামক আরেকটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে


কাঁচা ইটের উপর নির্মিত মাটির বিহারটি খুবই মনোরম ছিল। মূল বিহারের চারপাশে  অপূর্বকারুকাজ মণ্ডিত থাম এবং বারান্দা ছিল যা রাজানগর রাজ বিহারের আদলে নির্মিত। পোড়ামাটির নির্মিত হারবা দিয়ে ছাউনি ছিল  বিহারের দক্ষিণ পাশে একটি পুকুর ছিল। পুকুরটিভরাট করে এখন একটি সুদশ্য ধর্মমঞ্চ তৈরি করা হয় পশ্চিমে একটি বড় বোধিগাছ আছে।বর্তমানে বোধিবৄক্ষ মূলের মন্দির এবং পাশের ভিক্ষু সীমা ঘরটি সংস্কার করে আধুনিকায়নকরা হয়েছে। বিহারের বড় বুদ্ধ মূর্তিটি খুবই সুন্দর এবং মনোহর  এরকম শৈল্পিক নিদর্শনখুব কম দেখা যায়। দেয়ালে পীচ বোডের উপর অঙ্কিত বোধিগাছের ছবিবুদ্ধের কঠোর ধ্যান,সিবলীআনন্দঅঙ্গুলিমালা  এবং জাতকের বিভিন্ন উপাখ্যানের ছবিগুলি এত নিখুত ভাবেশিল্পী তার তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যেদেখলে জীবন্ত প্রতিমূর্তি মনে হতো। অন্তরে ভক্তিআপনা থেকেই জেগে উঠত। আমরা শিল্পী ব্রহ্মপদ আচায্যের নিকট কৃতজ্ঞ। পরবর্তীতে বিহার পাকা করার সময় ছবি গুলি নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি বুদ্ধ মূর্তি শুদ্ধানন্দ ভান্তে কতৄকনির্মিত। বর্তমানে নতুন একটি বুদ্ধ মূর্তি জ্ঞানবোধি (দিবানন্দভান্তে  বিহারাধ্যক্ষ সুনন্দভান্তের  তত্তাবধানে থাইল্যান্ড থেকে  আনা হয়   দুজনই (শুদ্ধানন্দ  দিবানন্দ)এই বিহারেশ্রামণ্য জীবন শুরু করেন।
 বিহারে বিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ সুনন্দ ভিক্ষুর একটি  ধর্মীয় পাঠাগার আছে, যা সবার জন্যউন্মুক্ত। এতে প্রায় সহস্রাধিক বই আছে।
 শ্রীমৎ সুমঙ্গল মহাস্হবিরশ্রীমৎ সংঘরক্ষিত মহাস্হবিরশ্রীমৎ শান্তিজোতি ভিক্ষুশ্রীমৎলোকানন্দ মহাস্হবির এবং বিপসসী্ প্রমূখ ভিক্ষুরা  বিহারে বিহারাধ্যক্ষ হিসেবে থেকেসদ্ধর্ম চর্চা এবং রক্ষায়  অপরিমেয় ভুমিকা রাখেন। বর্তমানে  বিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ সুনন্দ ভিক্ষু,উপাধ্যক্ষ নন্দপ্রিয় ভিক্ষু এবং  জন শ্রমণ   জন সেবক আছেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধদের পরমারাধ্য ধূতাঙ্গঁ ভান্তে শ্রীমৎ শীলানন্দ মহাস্হবিরের জন্মভূমি এইগ্রামে এবং এই বিহারেই ১৯৮৮ সালে শ্রীমৎলোকানন্দ মহাস্হবির  শ্রীমৎধর্মসেনমহাস্হবিরের পরিচালনায় প্রব্রজ্জিত জীবন শুরু করেন। এছাড়া শ্রীমৎশাসনপ্রিয় ভিক্ষু,শ্রীমৎ শুদ্ধানন্দ ভিক্ষুশ্রীমৎ প্রিয়ানন্দশ্রীমৎঅরূপানন্দশ্রীমৎশ্রদ্ধানন্দশ্রীমৎধর্মানন্দ ,শ্রীমৎপ্রজ্ঞানন্দ , শ্রীমৎদিবানন্দ , শ্রীমৎরাহুলানন্দ সহ অনেকে  বিহারে শ্রামণ্য জীবনশুরু করেন শ্রদ্ধেয় লোকানন্দ মহাস্হবিরের প্রচেষ্ঠায়। বিহারের পশ্চিম দিকে বোধিমন্দিরের পাশে অত্র সোনাইছড়ি গ্রামের সন্তান শ্রীমৎ বুদ্ধানন্দ স্হবিরের একটি স্মৃতি মন্দিরআছে।  গ্রামেরই আরেক জন বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রীমৎকল্যাণমিত্র (গৃহী নাম-সুগত বড়ুয়া)ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার করে শেষ জীবনে গৌহাটি বৌদ্ধ বিহারে অবস্হানকালীন সময়ে দেহ ত্যাগ করেন(সূত্রঃ-“ধর্মসেনাপতি পৄষ্ঠাঃ১১৯)

শ্রীমৎলোকানন্দ মহাস্হবিরের সময়ে সোনাইছড়ি রাজ বিহারএর সংস্কার কা শুরু হয়,যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে পূনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমানের প্রাসাদোপম নান্দনিক বিশাল হল ঘরসমন্বিত আধুনিক যে বিহারটি আমরা দেখতে পাইতা সৃষ্ঠিতে সেক্রেটারী সুকৃতি রঞ্জনবড়ুয়াবিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ সুনন্দ ভিক্ষু এবং গ্রামবাসীর কঠোর পরিশ্রমও অবদান চিরস্মরণীয়হয়ে থাকবে। 

সোনাইছড়ি রাজ বিহার প্রাঙ্গনের আয়তননির্মাণশৈলী, নান্দনিকতায় এটি রাঙ্গুনীয়ারঅন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ বিহার বললেও অত্যুক্তি হবে না।


                                    “May All Beings be Happy