ভারতে মুসলমান নির্যাতনের কারনে এখন পর্যন্ত ১ জনও পালিয়ে বাংলেদেশে আসেনি। ওখানে মুসলিম নির্যাতন হয়না সেটা নয়। ১ টা ঘটনা দেখিয়ে ১০ হাজার ঘটনা সহীহ্ করাটা অযৌক্তিক।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের একটা ভিডিও দেখেছি যেখানে মুসলিমরা ভাংচুর চালাচ্ছে এবং বলছে "জয় শ্রী রাম গাড়ে ভরে দিবে", হিন্দু বলতে কিছু রাখবে না (ভিডিও কমেন্টে)। ভাবা যায়!
ভারতে এত নির্যাতনের পরেও সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের আদর আপ্যায়ন করার পরেও দিন দিন হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে!
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটাই বড় কথা নয়। তারা সব সময় আতংকে থাকে কখন পান থেকে চুন খসলেই হামলা শুরু হয়ে যাবে। প্রতিনিয় মুসলিম বন্ধুদের বুলিং শুনে শুনে এরা বড় হচ্ছে। গরুর মাংসের দাওয়াত, আকাডা, কাউট্টা নোমো, মালাউনের বাচ্চা আপনার হিন্দু বন্ধুকে কতবার শুনিয়েছেন?
ভারত, প্যালেস্টাইনের কথায় পরে আসতেছি। আপনার নিজের দেশের অবস্থা কি সেটা একটু শুনি। আপনার দেশে মাইনোরিটি নিয়ে কথা বললেই আপনি আঙুল তুলবেন অন্য দেশের দিকে সেটা তো হবে না। একই সাথে অন্য দেশেও আপনার জাত ভাইয়ের আকামা-কুকাম আছে, সেগুলো তুলে ধরুন।
বাংলাদেশে (পূর্ববঙ্গ) হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯০০-বর্তমান)
বাংলাদেশ তথা পূর্ববঙ্গের ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসন, ভারত-পাকিস্তান বিভাজন, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতন ও দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। নিচে ১৯০০ সালের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো।
ব্রিটিশ আমল (১৯০০-১৯৪৭)
১/ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বনাম সাম্প্রদায়িক বিভক্তি
• ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত করে, যা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে।
• ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও সাম্প্রদায়িক বিভেদ থেকে যায়।
• ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গা – যেখানে হিন্দুদের উপর ব্যাপক সহিংসতা চালানো হয়। হাজারো হিন্দু মারা যায় এবং অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়।
পাকিস্তান শাসনকাল (১৯৪৭-১৯৭১)
২/ দেশভাগ ও তার ফলাফল (১৯৪৭)
• ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
• পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) হিন্দুদের সম্পত্তি লুট, হত্যা ও ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে।
৩/ “এনিমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট” (১৯৬৫)
• পাকিস্তান সরকার “শত্রু সম্পত্তি আইন” জারি করে, যার ফলে হিন্দুদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
• এটি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে “অর্পিত সম্পত্তি আইন” নামে বহাল থাকে এবং বহু হিন্দু পরিবার তাদের জমি হারায়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৯৭১)
৪/ গণহত্যা ও হিন্দুদের উপর বিশেষ টার্গেট
• পাকিস্তানি বাহিনী বিশেষভাবে হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যা, ধর্ষণ এবং ধর্মান্তর ঘটায়।
• হিন্দুদের চিহ্নিত করতে বাড়ির দেয়ালে “H” চিহ্ন দেওয়া হয়।
• ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর মধ্যে বিপুলসংখ্যক হিন্দু ছিল।
• প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে পালিয়ে যায়, যার মধ্যে অনেকেই হিন্দু ছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশ (১৯৭১-বর্তমান)
৫/ ১৯৭২-১৯৯০: সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংবিধান পরিবর্তন
• ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর বাংলাদেশ ইসলামীকরণের পথে হাঁটতে থাকে।
• ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সংখ্যালঘুদের আরও কোণঠাসা করে।
• এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং তাদের সম্পত্তি দখল করা হয়।
৬/ ১৯৯০-এর দশক: বাবরি মসজিদ ভাঙার পর দাঙ্গা (১৯৯২)
• ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বাংলাদেশে ব্যাপক হিন্দু নির্যাতন হয়।
• মন্দির ধ্বংস, দোকানপাট লুট, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে।
৭/ ২০০১: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় হিন্দুদের উপর নির্যাতন
• নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা বেড়ে যায়।
• ধর্ষণ, হত্যা, মন্দির ধ্বংস ও জোরপূর্বক দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে।
৮/ ২০১৩-২০১৪: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও হিন্দুদের উপর হামলা
• জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর তাদের সমর্থকরা হিন্দুদের উপর হামলা চালায়।
• রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ধ্বংস করা হয়।
৯/ ২০২১: কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনার পর দাঙ্গা
-দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া গেলে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
• বহু মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট ও ধ্বংস করা হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় বারবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তবুও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
সমাধানের জন্য করণীয়:
1. সংখ্যালঘুদের জন্য কার্যকর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
2. সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদান।
3. সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি রক্ষায় অর্পিত সম্পত্তি আইন পুরোপুরি বাতিল করা।
4. শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা।
এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা ও আলোচনা প্রয়োজন, যাতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
"গত ১০০ বছরে হিন্দু কত % থেকে বর্তমানে কত % এ দাড়িয়েছে" এই প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই।